হাওড়া জেলার দক্ষিণে শ্যামপুর থানার অন্তর্গত পিছলদহ গ্রামের (২২.২৫° উত্তর ,৮৮.০৩° পূর্ব)) নামকরণ সম্পর্কে স্থানীয় একটি জনশ্রুতি হল মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্য পুরী থেকে পাণিহাটি যাওয়ার পথে এই স্থানে আড়াই দন্ড কাল(১ঘন্টা) বিশ্রাম নিয়েছিলেন এবং এখান দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁর পা পিছলে যায়। সেই থেকেই এই গ্রামের নাম পিছলদহ। 'দহ' শব্দটি সংস্কৃত হ্রদ থেকে এসেছে যার অর্থ বিরাট জলাশয়।অর্থাৎ নদীতীরবর্তী এই ভূভাগের তীরভূমিতে পা পিছলে যাওয়া থেকেই ' পিছলদহ' নাম। এই ব্যাখ্যা কতটা গ্রহণযোগ্য তা ক্রমশঃ প্রকাশ্য। আগে দেখে নেওয়া যাক্ প্রাচীন মানচিত্রে এই স্থানটির কোনো উল্লেখ আছে কিনা।
দেখা যাচ্ছে, ১৫৫৩ খ্রিষ্টাব্দের ডি- ব্যারোজ ও ১৫৬১ খ্রীস্টাব্দের গাস্টালডির মানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের কাছে রূপনারায়ণ (?) ও দামোদরের(?) মধ্যবর্তী একটি স্থানকে যথাক্রমে 'পিসলতা'(Pisolta) এবং ' পিকলদা'(Picalda) নামে চিহ্নিত করা হয়েছে। ও. ম্যালি ১৮৯২ সালে প্রকাশিত সি. আর. উইলসনের জার্নালের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জানিয়েছেন -"Pisolta has been identified with the modern village of Pichhaldaha, close to Fort Mornington Point." এই 'ফোর্ট মর্নিংটন পয়েন্ট' হল ১৭৬৫-১৭৬৭ খ্রীষ্টাব্দে লর্ড ক্লাইভের দ্বারা নির্মিত একটি দুর্গ (বর্তমানে ভগ্নদশা) যা গাদিয়াড়া (হাওড়া) রূপনারায়ণ টুরিস্ট লজের সামনে নদীর পাড় থেকে ২৫ মিটার পূর্বে অবস্থান করছে। ও. ম্যালির বর্ণনা থেকে বর্তমান পিছলদহ গ্রামের পূর্ব নাম যে 'পিসলতা' বা ' পিকলদা' ছিল সে ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার আগে পাঠককে আর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মনোযোগী হতে অনুরোধ করছি।সেটা হল চৈতন্য প্রসঙ্গ।
অন্যতম চৈতন্যজীবনীকার কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী আনুমানিক ১৬১৬ খ্রীস্টাব্দে রচিত শ্রীশ্রী চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থের মধ্যলীলার ষোড়শ পরিচ্ছেদে 'পিচ্ছলদা' শব্দটি দু'বার ব্যবহার করেছেন। 'পিচ্ছলদা' শব্দটি 'পিছলদহ' শব্দের অপভ্রংশ হতে পারে। গ্রন্থে বলা হয়েছে --
১. পিচ্ছলদা পর্যন্ত সব তার অধিকার।
তার ভয়ে নদী কেহ হৈতে নারে পার।।
২. মন্ত্রেশ্বর দুষ্ট নদে পার করাইল।
পিচ্ছলদা পর্যন্ত সেই যবন আইল।।
চৈতন্যজীবন পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৫১৪ খ্রীষ্টাব্দের বিজয়াদশমীর দিন শ্রীচৈতন্য 'গৌড় দেশ দিয়া' বৃন্দাবনের উদ্দেশে যাওয়ার জন্য উড়িষ্যার পুরী থেকে যাত্রা শুরু করেছিলেন। সেসময় বঙ্গদেশ থেকে পুরী যাতায়াতের যে তিনটি পথের উল্লেখ পাওয়া যায় সেগুলি হল --
ক) দক্ষিণ বঙ্গের যাত্রীদের জন্য -
আটিসারা ( বারুইপুর) > ছত্রভোগ > (জয়নগর -মজিলপুর) > তমলুক > নারায়ণগড় > দাঁতন > জলেশ্বর > ভদ্রক > পুরী
খ) মধ্যবঙ্গের যাত্রীদের জন্য -
পাণিহাটি > আন্দুল > সাঁকরাইল > নিমকির খাল ধরে বাগনান > কোলাঘাট > পাঁশকুড়া > রঘুনাথবাড়ি > পিছলদা > নারায়ণগড় > বেলদা > দাঁতন > সুবর্ণরেখা ধরে জলেশ্বর > রেমুণা >যাজপুর > কটক > ভুবনেশ্বর > পুরী
গ) উত্তর বঙ্গের যাত্রীদের জন্য -
বর্ধমান > হাজিপুর > মেদিনীপুর > হরিহরপুর > কেশপুর > নারায়নগড় > বালেশ্বর > নীলগড় > বৈতরণী >সাক্ষীগোপাল > পুরী
এই তিনটি পথের কোনোটি ছিল পায়ে হাঁটা, কোনোটি আবার নদীর আধিক্য থাকার কারণে ব্যয়বহুল। এজন্য সেসময় বঙ্গদেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত ছিল --
"হাতে কড়ি পায়ে বল
তবে যাবি নীলাচল।"
এখন প্রশ্ন, চৈতন্য সেবার পুরী থেকে পাণিহাটি গিয়েছিলেন কোন্ পথে?
চৈতন্যচরিতামৃত গ্রন্থে দ্বিতীয় পথটির কিছু কিছু স্থানের উল্লেখ পাওয়া যায়। এ পথেই পিছলদার (পিছলদহ) অবস্থান। কবিরাজ গোস্বামী জানিয়েছেন, মন্ত্রেশ্বর নদের একদিকে ওড্রদেশ( উড়িষ্যা) তথা প্রতাপরুদ্রের (১৪৯৭-১৫৪০ খ্রীষ্টাব্দ) সীমা, আর একদিকে 'পিচ্ছলদা' অর্থাৎ যবনরাজ্য শুরু (বাংলা) যার সর্বময় কর্তা আলাউদ্দীন হুসেনশাহ( ১৪৯৩-১৫১৯ খ্রী.)।
চৈতন্যের গৌড় যাত্রাকালে বাংলার সঙ্গে উড়িষ্যার সম্পর্ক মধুর ছিল না। যোগেশচন্দ্র বসু লিখেছেন -" শ্রীচৈতন্য যে সময় উড়িষ্যায় গমন করেন,সে সময় উৎকলের হিন্দু রাজার সহিত বাঙ্গালার মুসলমান সুলতানের বিবাদ চলিতেছিল।" ১৫০৯ খ্রীস্টাব্দের শেষ দিকে হুসেন শাহের সেনাপতি ইসমাইল গাজী উড়িষ্যা আক্রমণ করে কিছু অঞ্চল দখল করে নেন কিন্তু প্রতাপরুদ্র শেষপর্যন্ত অধিগৃহীত এলাকা পুনরুদ্ধার করে বঙ্গের হুগলী নদী (গড় মান্দারণ) পর্যন্ত সীমানা বিস্তার করেছিলেন। তবে প্রধান কর্মচারী গোবিন্দ বিদ্যাধরের ষড়যন্ত্র ও হুসেন শাহের বারবার আক্রমণের ফলে প্রতাপরুদ্রের শাসনের পূর্ব সীমা কিছুটা সংকুচিত হয়ে পড়ে।
১৫১৪ খ্রীস্টাব্দে এই পরিস্থিতি ছিল ভয়ানক।সেই কারণে রাজা প্রতাপরুদ্র ও রায় রামানন্দ (রাজা প্রতাপরুদ্রের অধীনস্থ গোদাবরী তীরবর্তী বিদ্যানগরের শাসনকর্তা) চৈতন্যের গৌড় যাত্রা নিয়ে যথেষ্ট উদ্বিগ্ন ছিলেন।পূর্বেই বলা হয়েছে পুরী থেকে গৌড়ে যাবার পথ ছিল তিনটি। শিশির কুমার ঘোষ জানিয়েছেন," সেইসময় এমন যুদ্ধ বাঁধিয়া উঠিয়াছে যে, এই তিন পথই বন্ধ।" জীবনীকারদের বিবরণ অনুযায়ী চৈতন্য অনেক লোকজন নিয়ে পুরী থেকে যাত্রা করে ভুবনেশ্বর, কটক, যাজপুর, রেমুনা হয়ে উড়িষ্যা সীমানা মন্ত্রেশ্বর উপকূলে উপস্থিত হন। বিতর্কের শুরু এই মন্ত্রেশ্বর নদের তীরের একটি ভূখন্ডকে ঘিরে। সমনামে হাওড়া (পিছলদহ) ও পূর্ব মেদিনীপুর (পিছলদা) জেলায় দুটি স্থান রয়েছে এবং দুটি স্থানেই মহাপ্রভুর বিগ্রহ ও মন্দির বিদ্যমান।
অনেকে মনে করেন, এই উড়িষ্যা সীমানা বলতে তমলুক বা তার নিকটবর্তী কোনো অঞ্চলকে বোঝানো হয়েছে এবং মন্ত্রেশ্বর নদ বর্তমান রূপনারায়ণের পূর্ব নাম। পিচ্ছলদা হল বর্তমান হাওড়া জেলার দক্ষিণে শ্যামপুর থানার অন্তর্গত পিছলদহ গ্রাম। কবিরাজ গোস্বামীর বিবরণের প্রেক্ষিতে তাঁদের যুক্তি, পুরী থেকে উড়িষ্যা সীমায় অর্থাৎ তমলুকে পৌঁছানোর পর সেখানকার 'রাজ-অধিকারী' (ভূমিরক্ষক বা প্রশাসক) শ্রীচৈতন্যকে 'দিন দুই চারি ' সেখানে বিশ্রাম নেবার পরামর্শ দেন যাতে তিনি নদীর ওপারের অর্থাৎ বাংলার সীমার (পিছলদহ) 'মদ্যপ যবন' প্রশাসকের সঙ্গে 'সন্ধি' করে নিরাপদে নদী পেরিয়ে মহাপ্রভুর ' সুখেতে' পাণিহাটি যাত্রার ব্যবস্থা করতে পারেন। এদিকে 'জগন্নাথ হৈতে 'আগত' এক সন্ন্যাসী'র আগমণের খবর পেয়ে সেই যবন প্রশাসক তাঁর এক চরকে হিন্দুর ছদ্মবেশে উড়িষ্যা সীমান্তে সবিস্তারে খবর নিতে পাঠান এবং সেই চর ফিরে গিয়ে তাঁকে সকল বৃত্তান্ত জানান। তিনি সেই বর্ণনা শুনে ভাববিগলিত হয়ে পড়েন এবং নিজে উড়িষ্যা সীমানায় পৌঁছে চৈতন্যের শ্রী চরণে প্রণাম জানিয়ে পরম ভক্তে রূপান্তরিত হন। তিনিই মহাপ্রভুর নির্বিঘ্নে বাংলায় যাত্রার সুবন্দোবস্ত করে দেন। জলদস্যুর হানা প্রতিরোধের নিমিত্তে দশ নৌকা ভর্তি সৈন্য নিয়ে চৈতন্য ও তাঁর লোকজনদের একটি 'নবীন নৌকা'য় ( সুরম্য) চাপিয়ে তমলুক থেকে মন্ত্রেশ্বর পার হয়ে পিছলদহে নিয়ে আসেন। তারপর সেই যবন নিজ স্থানে অর্থাৎ পিছলদহে থেকে যান এবং আড়াই দন্ড বিশ্রাম নিয়ে মহাপ্রভু হুগলি নদী পথে বেতড় , কলকাতা, শুকচর অতিক্রম করে সপার্ষদ পাণিহাটিতে পৌঁছান।শ্যামপুর থানার পিছলদহে প্রাচীন বট, অশ্বত্থ ও তমাল বৃক্ষ সংলগ্ন এলাকাকে স্থানীয় মানুষজন চৈতন্য পাদস্পর্শিত পবিত্র ভূমি বলে মনে করেন।
এবার সমকালীন ইতিহাসের আলোকে উপরোক্ত দৃষ্টিকোণ পর্যালোচনা করে দেখা যাক্।
বঙ্গোপসাগরের নিকটবর্তী মন্ত্রেশ্বর নদের উল্লেখ শুধু চৈতন্যচরিতামৃত নয়, জয়ানন্দের চৈতন্যমঙ্গল, কবি কর্ণপুরের চৈতন্যচন্দ্রোদয়, গোবিন্দদাসের কড়চা, কবিকঙ্কন মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল সহ অষ্টাদশ শতকের একাধিক বৈষ্ণব শ্রীপাট বিবরণীতে পাওয়া যায়। যদিও ষোড়শ শতকের কোনো মানচিত্রে (ডি-ব্যারোজ ১৫৫৩, গাস্টালডি -১৫৬১,হন্ডিভ্স-১৬১৪, ক্যান্টেলি দ্য ভিগনোলা-১৬৮৩, ভ্যান ডেন ব্রুক-১৬৬০, জি. ডেলিসলে-১৭২০, ইজাক টিরিঅন-১৭৩০, এফ. ডে উইট-১৭২৬, রেনেল-১৭৬৪) এই নামের কোনো নদীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না । এবার রূপনারায়ণের প্রসঙ্গে আসা যাক্। বিভিন্ন সময়ের মানচিত্রকর ভিন্ন ভিন্ন নামে রূপনারায়ণকে চিহ্নিত করেছেন, যেমন গঙ্গা (ডি-ব্যারোজ এবং গাস্টালডি), গুয়েঙ্গা ( ব্লেভ), তাম্বোলি(টমাস বাউরি), তোম্বারলি(পাইলট চার্ট), পাত্র ঘাটা(ভ্যালেনটিন), রেনেল( রূপনারায়ণ)। কিন্তু দেখা যাচ্ছে কেউই 'মন্ত্রেশ্বর' শব্দটি ব্যাবহার করেন নি। এর কারণ হতে পারে মন্ত্রেশ্বর তেমন গুরুত্বপূর্ণ কোনো নদ নয় বা দৈর্ঘ্য প্রস্থের বিচারে তার প্রবাহ এত নগণ্য যে আলাদা করে উল্লেখ করার দাবি রাখে না।


জলদস্যুর প্রসঙ্গটি ইতিহাসসম্মত। 'মেদিনীপুরের ইতিহাস' গ্রন্থে বলা হয়েছে - "....নদী পার হওয়া বড়ই দুঃসাধ্য ছিল। ... জলপথ জলদস্যুসমাকুল ছিল।" চৈতন্যচরিতামৃতে এজন্য 'মন্ত্রেশ্বর দুষ্ট নদ' বলা হয়েছে। তবে শুধু মন্ত্রেশ্বর নয় সেসময়ের অনেক নদ নদীতেই জলদস্যুরা হঠাৎ হঠাৎ আক্রমণ করে লুঠপাট চালাত। এমনকি বঙ্গোপসাগর থেকে সংকীর্ণ নদীপথে অনেকটা ভিতরে গিয়েও আক্রমণ, হত্যা ও লুন্ঠন চালাত বলে বিভিন্ন গ্রন্থে উল্লেখ আছে।
উপরোক্ত মতাবলম্বীরা উড়িষ্যার সীমা হিসেবে যে তমলুকের কথা বলেছেন তা যথাযথ বলে মনে হয় না। কারণ পুরী মন্দিরে সংরক্ষিত তালপাতায় হস্তলিখিত মাদলাপঞ্জীর বিবরণ অনুযায়ী সেসময় উড়িষ্যা বা উৎকলদেশ যে ৩১ টি দন্ডপাঠে বিভক্ত ছিল তার মধ্যে ৬ টি দন্ডপাঠ বর্তমান মেদিনীপুর জেলার (অখন্ড) অন্তর্ভুক্ত। যথা- (১) টানিয়া, (২) জৌলিতি, (৩) নারায়ণপুর, (৪) নইগাঁ, (৫) মালঝিটা, (৬) ভঞ্জভূম-বারিপাদা। এই দন্ডপাঠগুলি যেসব এলাকা বা অঞ্চলকে নির্দিষ্ট করত তাদের মধ্যে তমলুকের উল্লেখ নেই। যোগেশচন্দ্র বসু লিখেছেন - "তৎকালে তাম্রলিপ্ত একটি স্বতন্ত্র রাজ্য ছিল; উহা উড়িষ্যার অন্তর্গত ছিল না। তাম্রলিপ্তের দক্ষিণ হইতেই উড়িষ্যার সীমা আরম্ভ হইয়াছিল।" চৈতন্যচরিতামৃতে 'ওড্রদেশসীমা'য় যে রাজ অধিকারীর কথা বলা হয়েছে তিনি উৎকলরাজ প্রতাপরুদ্রের অধীন একজন প্রশাসক।
তাহলে স্থানটি তমলুক নয়।কেননা চৈতন্য মাত্র একবারই তমলুকে পদার্পণ করেছিলেন বলে ( ১৫১০ খ্রীস্টাব্দে প্রথমবার ছত্রভোগ হয়ে পুরী যাত্রার সময়) জীবনীকাররা উল্লেখ করেছেন। তমাল বৃক্ষের নিচে আড়াই দন্ড বিশ্রাম নেওয়ার প্রসঙ্গটি কোনো জীবনী গ্রন্থে নেই।
এবার আসা যাক্ 'ওড্রদেশ সীমা'য় সেই রাজ অধিকারীর প্রসঙ্গে। তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় 'শ্রীচৈতন্যের পুরী যাত্রাপথ' শীর্ষক প্রবন্ধে বলেছেন যে সেই অধিকারী হলেন গোপীনাথ পট্টনায়ক । আনুমানিক ১৫৭২ খ্রীস্টাব্দে রচিত কবি কর্ণপুরের সংস্কৃত নাটক 'চৈতন্যচন্দ্রোদয়' ও অন্যান্য চৈতন্যজীবনী অনুসরণে শিশির কুমার ঘোষ যে 'অমিয় নিমাইচরিত' গ্রন্থ রচনা করেছেন তাতে বলা হয়েছে, পিচ্ছলদার যবন সীমারক্ষক যখন চৈতন্য ভক্তে রূপান্তরিত হলেন ''তখন গোপীনাথ বলিতেছেন, 'ওহে অধিকারি, প্রভূ গণসহ গৌড়ে যাইবেন, তুমি তাঁহার সহায়তা কর।"এই গোপীনাথ পট্টনায়ক কে? যোগেশচন্দ্র বসু তাঁর 'মেদিনীপুরের ইতিহাস' গ্রন্থে লিখেছেন-" ষোড়শ শতাব্দীর প্রথম পাদে চৈতন্যদেবের প্রিয়শিষ্য রামানন্দ রায়ের জ্যেষ্ঠ ভ্রাতা গোপীনাথ পট্টনায়ক মালঝিটা দন্ডপাঠে প্রতিষ্ঠিত ছিলেন।" বর্তমানের পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি, রামনগর, খেজুরী ও ভগবানপুর থানাধীন এলাকা নিয়ে গঠিত ছিল সেকালের মালঝিটা দন্ডপাঠ। অর্থাৎ এই মালঝিটা দন্ডপাঠ অধীন এলাকার প্রান্ত দিয়ে বয়ে যেত মন্ত্রেশ্বর। এই অঞ্চলের ক্ষেত্রসমীক্ষা করে তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় আরও জানিয়েছেন - "প্রাচীন পথ দেখে মনে হয় কংসাবতী থেকে মন্ত্রেশ্বর উৎপন্ন হয়ে পিছলদার (পূর্ব মেদিনীপুর) পশ্চিমপ্রান্ত দিয়ে কিছুটা অগ্রসর হয়ে (বর্তমানে রসুলপুর নদী) সমুদ্রে প্রবেশ করত। "ড. এস. কে. অয়নগর তাঁর 'Cambridge History of India' গ্রন্থেও মন্ত্রেশ্বর নদের এমন অবস্থান অনুমান করেছেন। মনে হয় মন্ত্রেশ্বর নদী কংসাবতী থেকে উৎপন্ন হয়ে দক্ষিণে অগ্রসর হয়েছিল সমুদ্রের দিকে। এ অনুমান অমুলক নয়। কারণ মহামহোপাধ্যায় হরপ্রসাদ শাস্ত্রী কবি রামচন্দ্রের লেখা একটি প্রাচীন সংস্কৃত পুঁথি আবিষ্কার করেছিলেন। তাতে তাম্রলিপ্তের রাজা গোপীচন্দ্রের নাম পাওয়া যায়। সেই পুঁথিতে উল্লিখিত গোপীচন্দ্রের কাহিনী যোগেশচন্দ্র বসুর ভাষায় - "গোপীচন্দ্র ছত্রেশ্বরী দেবীর সম্মুখে ক্রোধে অধীর হইয়া এক ব্রাহ্মণের শিরশ্ছেদ করায় দেবী অধোমুখী হইয়া থাকেন। কিছুদিন পরে গোপীচন্দ্র পাঙ্গাভূমিতে গিয়া গঙ্গাসাগরের স্রোতে মন্ত্রেশ্বরের কাছে জলে ডুবিয়া যান।" এই বর্ণনা থেকে সহজেই অনুমান করা যায় মন্ত্রেশ্বরের ধারা সাগরদ্বীপের নিকটবর্তী জলপ্রবাহে গিয়ে মিশত। সেদিক থেকে রূপনারায়ণের সঙ্গে তার দূরত্ব অনেক।
সেকালে সম্ভবত পিছলদার পাশ দিয়ে একটি ধারা রঘুনাথবাড়ি হয়ে পাঁশকুড়া পর্যন্ত ছিল যে পথে চৈতন্য পাঁশকুড়ায় পৌঁছেছিলেন।ষোড়শ শতকের প্রথমদিকে এই নদ প্রসস্থ ছিল না বলেই মনে হয়। কারণ সমকালের কবি মুকুন্দরাম চক্রবর্তী তাঁর চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে লিখেছেন - "বুড়া মন্ত্রেশ্বর বায় বানিয়ার বালা"। রামকুমার মুখোপাধ্যায় তাঁর গবেষণামূলক 'ধনপতির সিংহলযাত্রা' উপন্যাসের 'নদ-নদীর মগরা গমন' (২৭) শীর্ষক পরিচ্ছেদে সহমত পোষণ করে মন্ত্রেশ্বর ও রূপনারায়ণকে পৃথক দুটি নদী হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
পিছলদার পার্শ্ববর্তী ডিহি কাশিমপুরে প্রাচীন একটি গৌরমূর্তি আছে যার কথা নবদ্বীপবাসী হরিদাস দাস তাঁর 'মধ্যযুগীয় গৌড়ীয় সাহিত্যের ভৌগোলিক ও ঐতিহাসিক অভিধান' গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন। রঘুনাথবাড়ি ও পাঁশকুঁড়ার মন্দিরে মহাপ্রভুর প্রাচীন বিগ্রহ চৈতন্যের যাত্রাপথের স্মৃতি নিয়ে আজও বিরাজমান।
এবার আসা যাক পাণিহাটি পর্যন্ত বাকি পথপরিক্রমা প্রসঙ্গে ।জগদীশ চক্রবর্তী তাঁর 'তাম্রলিপ্ত তমলুক থেকে দূরে' প্রবন্ধে ভাগীরথীর বেতড়- উলুবেড়িয়া - পাঁশকুড়া - পিংলা ও নারায়ণগড় গামী লুপ্ত খাতের কথা বলেছেন। বিপ্রদাস পিপলাই-এর মনসামঙ্গল ও কবিকঙ্কণ মুকুন্দরামের চণ্ডীমঙ্গল কাব্যে বর্ণিত গঙ্গার গতিধারার সঙ্গে এই ধারণার মিল রয়েছে । মুকুন্দরাম চণ্ডীমঙ্গলে লিখেছেন, শ্রীমন্ত সদাগরের নৌকা কলকাতা ও বেতড় পার হয়ে কালিকট যাবার সময় "ডাহিনে ছাড়িয়া যায় হিজলির পথ।" আবার হরিদাস দাস তাঁর 'বৈষ্ণব তীর্থ' গ্রন্থে এই জলপথের কথা সমর্থন করে জানিয়েছেন যে চৈতন্যদেবের সময়ে বেতড়ের একটু দক্ষিণ থেকে গঙ্গা বা ভাগীরথীর একটি শাখা পশ্চিমবাহিনী হয়ে আন্দুলের ওপর দিয়ে উলুবেড়িয়া, বাগনান হয়ে প্রবাহিত হত। 'বদর শাহের চড়' নামে অধিক পরিচিত এই পথ দিয়ে পর্তুগীজ নাবিকরা লবনের ব্যবসা করত। যদিও এই জলপথের স্থানীয় নাম ছিল 'নিমকির খাল '। পরবর্তীকালে কেউ কেউ একে 'কাটি গঙ্গা'ও বলেছেন। তাঁদের ধারণা গঙ্গাকে সরল পথে চালনার জন্য ইংরেজরা এই পথটি কেটেছিলেন। কিন্তু তা একেবারেই সত্যি নয়। এটি ভাগীরথীর প্রাচীন খাত। চৈতন্যপার্ষদ নিত্যানন্দ যে এই পথেই সাঁকরাইল থেকে আন্দুলে কৃষ্ণানন্দ চৌধুরীর অতিথি হয়েছিলেন তা জীবনীগ্রন্থ থেকে জানা যায়। যোগেশচন্দ্র বসু লিখেছেন - "এই পথ দিয়া অতি অল্প দিনেই উড়িষ্যায় যাওয়া যাইত।" শ্রীচৈতন্য যে একদিনেই পিছলদা থেকে পাণিহাটিতে রাঘব পন্ডিতের বাড়ি পৌঁছেছিলেন সেকথা জীবনীগ্রন্থে উল্লেখ করা আছে।
বিনয় ঘোষ রচিত ' পশ্চিম বঙ্গের সংস্কৃতি' গ্রন্থের সৌজন্যে প্রাপ্ত ষোড়শ -সপ্তদশ শতকের একটি মানচিত্রে পিছলদহ স্থানটিকে তমলুকের দক্ষিণে বঙ্গোপসাগরের নিকটে চিহ্নিত করা হয়েছে যা স্পষ্টতই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার অন্তর্গত । হরপ্রসাদ শাস্ত্রী তাঁর একটি অভিভাষণে জানিয়েছেন "খ্রীষ্টের জন্মের চৌদ্দ শত কি পনর শত বৎসর পরে যেসকল মনসার ও চন্ডীর গান পাওয়া যায়, তাহাতে তমলুকের নাম নাই। সেসময় লোকে পিছলদা ও ছত্রভোগ হইয়া সমুদ্রে যাইত।" এই ছত্রভোগ বর্তমান জয়নগর- মজিলপুর (দক্ষিন ২৪ পরগণা) থেকে ৬ কিমি. দক্ষিণে অবস্থিত ছিল।

ভৌগোলিক অবস্থানের দিক থেকে বিচার করলে শ্যামপুর অঞ্চলটি খুব প্রাচীন বলে মনে হয় না। নিকটবর্তী এলাকায় যে সব স্থাপত্যের সন্ধান পাওয়া গেছে তা অষ্টাদশ বা তার পরবর্তী কালের।সমগ্র অঞ্চলটি যে একদা নদীগর্ভে ছিল তার প্রমান বিভিন্ন সময়ে খননে প্রাপ্ত নৌকার খোল বা মাস্তুলের অংশবিশেষ থেকে পাওয়া যায়। পরে চর হিসেবে জেগে ওঠে ও অরণ্যসমাকীর্ণ হয়ে পড়ে।প্রবীণ ব্যক্তিদের বক্তব্যেও তা স্পষ্ট। তারপর মূলতঃ মেদিনীপুর থেকে বাসিন্দারা এই জেগে ওঠা চরভূমিতে এসে জঙ্গল পরিষ্কার করে বসবাস শুরু করে। ধীরে ধীরে গড়ে ওঠে জনপদ। এজন্য এ অঞ্চলের অনেক গ্রামের নামের সঙ্গে মেদিনীপুরের গ্রামনামের মিল পাওয়া যায়। যেমন- ভগবানপুর, কমলপুর, বরদাবাড়, শ্যামপুর, রাধাপুর, কামদেবপুর, চাউলখোলা ইত্যাদি।
সেদিক থেকে বিচার করলে পূর্ব মেদিনীপুর জেলাধীন পিছলদা সহ সমগ্র ভগবানপুর থানা ও পার্শ্ববর্তী এলাকা যথেষ্ট প্রাচীন। স্থানীয় স্থাপত্য ও বনেদী পরিবারের কুলপরিচয়ের পরম্পরা বিচার করলেও তার প্রমান মেলে।
তথ্য, ঐতিহাসিক প্রমাণ ও যুক্তির পারম্পর্য নিরপেক্ষ ভাবে পর্যালোচনার পরেও পিছলদহে শ্রীচেতন্য প্রসঙ্গটির সিদ্ধান্ত টানা সম্ভব নয়।কারন সেকাল- একালের পারস্পরিক আলোচনায় এখনও কিছু প্রশ্ন অমীমাংশিত থেকে গেল। সেগুলি এবার দেখে নেওয়া যাক্----
ক) তাপস বন্দ্যোপাধ্যায় যে উড়িষ্যার সীমারক্ষকের কথা বলেছেন তিনি মালঝিটা দন্ডপাঠের গোপীনাথ পট্টনায়ক নাও হতে পারেন।চৈতন্যচরিতামৃতে তাঁর নামের উল্লেখ নেই। আবার শিশির কুমার ঘোষ গোপীনাথের যে উক্তি তুলে ধরেছেন, কবিরাজ গোস্বামীর কাব্যে সেই উক্তির বক্তা মুকুন্দ দত্ত। জীবনীকার লিখেছেন-
তবে মুকুন্দ দত্ত কহে শুন মহাশয়।
গঙ্গাতীরে যাইতে মহাপ্রভুর মন হয়।।
তাহা যাইতে কর তুমি সহায় প্রকার।
এই বড় আজ্ঞা এই বড় উপকার।।
আবার, চৈতন্যের সঙ্গী হিসেবে যাঁরা সেদিন পুরী থেকে গৌড়ে যাওয়ার জন্য বেরিয়েছিলেন তাঁদের মধ্যে ছিলেন মহাপ্রভুর একান্ত ভক্ত গোপীনাথ আচার্যও। তাই প্রশ্ন থাকবেই উক্তিটির বক্তা সেই গোপীনাথ আচার্য নন তো?
খ) মাদলা পঞ্জীর বিবরণ অনুযায়ী, তাম্রলিপ্ত স্বশাসিত ছিল,উড়িষ্যা রাজ্যের দন্ডপাঠগুলির অন্তর্ভুক্ত ছিল না। আসলে অনঙ্গভীমদেবের সময় থেকে মুকুন্দদেবের রাজত্বকাল পর্যন্ত (১১৭৫-১৫৬৯ খ্রী.) উড়িষ্যার গঙ্গ বংশীয় রাজারা তমলুকের তদানীন্তন রাজবংশকে উৎখাত না করে তাঁদের সামন্ত রূপে রাজত্ব করার সুযোগ দেন। সেদিক থেকে বিচার করলে তমলুকও উড়িষ্যা রাজ্যেরই সীমা, নয় কি?
গ) শ্যামপুর থানার পিছলদহ গ্রামের মহাপ্রভু আশ্রমের উত্তরদিকে তমাল বৃক্ষ থেকে প্রায় ১৫ ফুট দূরে দেড় ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট একটি টেরাকোটার (পোড়ামাটির) মুন্ড রাঢ় অঞ্চলের লৌকিক দেবতা দক্ষিণ রায় হিসেবে খোলা জায়গায় পুজিত হন। অগ্রহায়ণ মাসের শুক্লপক্ষে এই দেবতার বার্ষিক উৎসব হয়। দক্ষিণরায় অরণ্য ও বাঘের দেবতা।স্থানটি যে একদা অরণ্যসমাকীর্ণ ও ব্যাঘ্রসংকুল ছিল তা এ থেকেই বোঝা যায়। একসময় মাটি খনন করতে গিয়ে এটি পাওয়া গেছে বলে প্রবীনদের মত। আবার এই গ্রামেরই মুখোপাধ্যায় পরিবারে সম্ভবত মস্তকবিহীন প্রাচীন এক নৃসিংহমূর্তি বারাহীচন্ডী হিসেবে পূজিত হন। সেটিও পুকুর খননের সময় উদ্ভুত। ভাস্কর্যশৈলীর নিরিখে এটি দ্বাদশ শতাব্দীর পাল যুগের বলে অনুমান।প্রাচীন মূর্তির পিছনে বর্তমানে সিংহবাহনে আসীন চতুর্ভূজা বর্ণময় সুসজ্জিত চন্ডীমূর্তি নির্মাণ করা হয়েছে। দেবীর ডানদিকে কৃষ্ণ বর্ণের প্রায় ৩ ফুট দৈর্ঘ্য,১ ফুট প্রস্থ ও দেড় ফুট উচ্চতাবিশিষ্ট আয়তাকার একটি প্রস্তরখন্ড রয়েছে। মনে হয় এটি কোনো স্থাপত্যের অংশ। তাছাড়া গ্রামে বিভিন্ন সময় পুকুর, কুয়া ইত্যাদি খনন করতে গিয়ে পুরানো খোলামকুচি, মৃৎপাত্র, মটির তৈজস ইত্যাদি পাওয়া গিয়েছে একাধিকবার। হাওড়া জেলা গবেষক তারাপদ সাঁতরা বলেছেন - "এখানে উৎখনন চালালে আরও প্রত্নতাত্ত্বিক আবিষ্কারের সম্ভাবনা আছে।" তাই প্রশ্ন হল এই টেরাকোটার মুখ, প্রস্তর মূর্তি বা স্থাপত্যের অংশ কি এ অঞ্চলে প্রাচীন কোনো জনপদের ইঙ্গিত বহন করছে?


রূপনারায়ণের প্রাচীন গতিপথ ও আজকের গতিপথের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে যথেষ্ট। বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়,দ্বারকেশ্বর ও শিলাবতীর মিলিত প্রবাহে সৃষ্ট এই নদ একসময় বাগনান - খালোড় - বাঁটুল - মুগকল্যান - হরিনারায়ণপুর - হাল্যান - কাঁটাগাছি - প্রতাপপুর - আমড়দহ- দানপেতিয়া - বাছরি- বৈঁচি - নারায়ণপুর- - কোটরা - কালীদহ - পিছলদহ - ইত্যাদি এলাকার উপর দিয়ে প্রবাহিত হত। বর্তমানে তা প্রায় ছয়- সাত কি.মি. পশ্চিম দিকে সরে গেছে। এইকারণে ঐসব এলাকা থেকে আকশ্মিকভাবে বিভিন্ন সময়ে নানা প্রত্নবস্তু খুঁজে পাওয়া গেছে। যেমন- সামতাবেড়িয়া (বিষ্ণু-বাসুদেব মূর্তি), খালোড়( বিষ্ণুমূর্তি), বাগনান-হরিনারায়ণপুর(বাসুদেবমূর্তি, মহিষমর্দিনী মূর্তি), বাছরি(বিষ্ণুমূর্তি, বিষ্ণুপট্ট), শ্যামপুর হরিনারায়ণপুর (বৌদ্ধ তারা মূর্তি), আমবেড়ে(দক্ষিণ রায়ের শিলা পিতলের কৌটায় যা বৌদ্ধ চৈতের ক্ষুদ্র সংস্করণ), দেউলি( বিষ্ণুমূর্তি), নুনেবাড়(বিষ্ণুমূর্তি), রাধাপুর(রোমান রণদেবতা জানুস-এর মূর্তি), পিছলদহ( নৃসিংহমূর্তি ও টেরাকোটার মুন্ড)। হিউএন সাং- এর বিবরণ অনুযায়ী, প্রাচীন তাম্রলিপ্ত রাজ্যটির আয়তন ছিল ১৪০০-১৫০০ লি। কানিংহামের মতে ৬ লিতে ১ মাইল হয়। অর্থাৎ প্রায় ৪০০ কি. মি. বিস্তৃত ছিল সেই বাণিজ্য নগরী। প্রাজ্ঞ ক্ষেত্রসমীক্ষক শিবেন্দু মান্নার মতে "সুপ্রাচীন তাম্রলিপ্ত সভ্যতা ও সংস্কৃতি বলয়ের মধ্যে বর্তমান কালের শ্যামপুর ও বাগনান এলাকার অন্তর্ভুক্তি সুনিশ্চিত।"
নদী কিংবা ইতিহাস এখনও নিরুত্তর। বিস্রস্ত চিহ্নের সূত্র এখনও অনায়ত্ত। চৈতন্য জন্মভূমির মতো চৈতন্য পাদস্পর্শে পুণ্যভূমি পিছলদহ এখনও অধরা। কিংবদন্তী আর ইতিহাসের সমন্বয়ে কবে মিলবে সেই খোঁজ, জানা নেই। তাই সুদূর অতীতের সেই ধূসর পান্ডুলিপির হরফ উদ্ধারে অনুসন্ধান চলতে থাকবে।
১. চৈতন্যচরিতামৃত - কৃষ্ণদাস কবিরাজ গোস্বামী ( সম্পা.-উপেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়), ১৯৮৬
২. চৈতন্য ভাগবত- বৃন্দাবন দাস( সম্পা.- কাঞ্চন বসু),১৯৮৩
৩.চণ্ডীমঙ্গল - কবিকঙ্কণ মুকুন্দরাম চক্রবর্তী ( সম্পা.- সুকুমার সেন),২০০৭
৪. বাইশা- (সম্পা.- আশুতোষ ভট্টাচার্য), ১৯৫৪
৫. শ্রী গৌড়ীয় পত্রিকা - ৭ বর্ষ,৪২ সংখ্যা,১৯২৯
৬. শ্রী শ্রী গৌড়ীয় বৈষ্ণব তীর্থ - হরিদাস দাস
৭. অমিয় নিমাই চরিত - শিশির কুমার ঘোষ,১৯৮৯
৮. মেদিনীপুরের ইতিহাস - যোগেশচন্দ্র বসু, ১৯৭৮
৯. বাঙালীর ইতিহাস (আদি পর্ব)- নীহাররঞ্জন রায়,১৯৮০
১০. হাওড়া শহরের ইতিবৃত্ত ( ১ম খন্ড) - অসিতকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়,১৯৯৪
১১. গঙ্গা পথের ইতিকথা - অশোক কুমার বসু, ১৯৮৯
১২. বাংলার হারানো নদীর ইতিকথা - প্রীতিতোষ রায়, ২০১২
১৩. বাংলাদেশের নদ-নদী ও পরিকল্পনা - কপিল ভট্টাচার্য, ১৯৫৪
১৪. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি - বিনয় ঘোষ, ১৯৯২
১৫. তমলুকের ইতিহাস - প্রদ্যোৎ কুমার মাইতি,২০১৫
১৬. হাওড়া ইতিহাস ও ঐতিহ্য - শিবেন্দু মান্না, ২০১১
১৭. হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি - তারাপদ সাঁতরা, ১৯৭৬
১৮. পশ্চিমবঙ্গ পত্রিকা ( মেদিনীপুর জেলা সংখ্যা), জানুয়ারি ২০০৪
১৯. সপ্তডিঙা পত্রিকা ( কালীপুজো সংখ্যা),১৪২৬
২০. সমকালীন পত্রিকা - কার্তিক, ১৩৮৮
২১. Bengal District Gazetteer Howrah - L.S.S Omalley,1909
২২. West Bengal District Gazetteers Howrah -Amiya Kumar Banerji, 1972
২৩. Journal of the Asiatic Society of Bengal- C.R.Wilson,1892
২৪. Cambridge History of India( vol-3)- Dr. S.K. Ayangar
মানচিত্র সূচিঃ-
১. ডি. ব্যারোজ - ১৫৫৩
২. ভ্যান ডেন ব্রুক- ১৬৬০
৩. রেনেল- ১৭৮২
৪. পশ্চিমবঙ্গের নদ-নদী(ষোড়শ -সপ্তদশ শতাব্দী)