Saturday, February 13, 2021

নবম পর্বঃ ডিহি মন্ডলঘাট (Dihi Mondalghat)

 ✍️ আশিস চক্রবর্তীঅমলেন্দু বেরা

হাওড়া জেলার দক্ষিণে শ্যামপুর থানার অন্তর্গত ডিহি মন্ডলঘাট গ্রামের (২২.২৯°উত্তর ৮৭.৯৬° পূর্ব) ঐতিহাসিকতা বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। 'ডিহি' ফারসি শব্দ যার অর্থ তালুক বা ছোট জমিদারি বা কয়েকটি  মৌজার সমষ্টি। ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, ১৫৮২ খ্রীষ্টাব্দে টোডরমলের রাজস্ব এলাকা বিভাগের সময় বর্তমান হাওড়া জেলার সমগ্র অংশ সুবা বাংলার যে তিনটি 'সরকার'-এ (সাতগাঁ, সুলিয়ামানাবাদ এবং মান্দারন) বিভক্ত করা হয়, তার মধ্যে মান্দারন সরকারের অন্তর্গত ছিল মন্ডলঘাট পরগণা।  অবশ্য আইন-ই-আকবরীতে বলা হয়েছে, প্রথমদিকে মন্ডলঘাট ছিল সরকার মান্দারনের একটি 'মহল' মাত্র, পরে পরগণায় রূপান্তরিত হয়। মুর্শিদকুলি খাঁর শাসনতান্ত্রিক সংস্কারে ১০০ গ্রামে ১টি পরগণা হত।পরগণাগুলির মধ্যে মন্ডলঘাট ছিল সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এর  আয়তন ছিল ১,৭৮,৭৫৬ একর বা ২৭৯.৩১ বর্গমাইল। জনসংখ্যা ১,৪২,৬৬৬। ১৭০৩ সালে জন থর্ণটন কৃত পাইলট চার্টে দামোদর নদকে 'মন্ডলঘাট নদ' হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়েছে। তার কারণ হয়তো গুরুত্বপূর্ণ  এই  পরগণার মধ্যে দিয়ে দামোদর  নদের নিম্নগতি প্রবাহ। খুব স্বাভাবিক ভাবেই তাম্রলিপ্ত বন্দরের সঙ্গে এই মন্ডলঘাট পরগণার আদান-প্রদান চলত। আইন-ই-আকবরী অনুসারে মন্ডলঘাট পরগনার রাজস্ব ছিল ৯,০৬,৭৭৫ দাম।

এই  'মন্ডলঘাট' নামকরণ প্রসঙ্গে বলা যায়, সেন বংশের বিখ্যাত রাজা ছিলেন বল্লাল সেন। তাঁর একজন মহামান্ডলিক  বর্তমান দাসপুর থানার (পূর্ব মেদিনীপুর) মহিষঘাটার অধিবাসী মহেশ মন্ডল। তাঁরই নামানুসারে এই মন্ডলঘাট পরগনার নামকরণ।

বর্তমান ডিহি মন্ডলঘাট গ্রামটি উক্ত পরগণার কেন্দ্র ছিল বলে মনে হয়। বৃটিশ আমলে  রূপনারায়ণ তীরবর্তী এ অঞ্চলটি Tamluk Salt Agent - এর অন্তর্গত লবন উৎপাদন ও বাণিজ্যের আড়তে পরিণত হয়েছিল বলে জানা যায়।

গ্রামের অন্যতম পুরাকীর্তি হল দক্ষিণাকালীর ত্রিখিলান অলিন্দযুক্ত দালান মন্দির।মন্দিরটি দৈর্ঘ্য-প্রস্থে প্রায় ২০'৬" (৬.৩ মি.) এবং উচ্চতায় ১২' (৩.৭ মি.)। চতুর্ভুজা দেবীর কালো কষ্টিপাথরের বিগ্রহটি মন্দিরের ডানদিকের পুকুর ( যা এলাকায় 'কালিদহ' নামে পরিচিত) খননের সময় পাওয়া যায়, যার উচ্চতা আনুমানিক ১৫ সেমি.  ও প্রস্থ ৭.৫ সেমি.। জনশ্রুতি, মন্দিরের বর্তমান সেবায়েত ঘোষাল পরিবারের পূর্বপুরুষ জনৈক দুর্গাপদ ঘোষালের বিধবা মাকে দেবী স্বপ্নাদেশ করেন এবং তারপর মন্দির নির্মাণ করে দেবীকে প্রতিষ্ঠা করা হয়। বাগনানের খালোড় কালীমন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা স্থানীয়  ভূস্বামী  কন্দর্পনারায়ণ মূল মন্দিরটি নির্মাণ করেছিলেন বলে কথিত আছে, যদিও এই কন্দর্পনারায়ণ সম্পর্কে বিশদ তথ্য পাওয়া যায় না। সেবায়েতদের অভিমত অনুযায়ী, একসময় বর্ধমানের রাজা মন্দিরের নামে বেশ কিছু জমি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দান করেছিলেন যার অধিকাংশই বর্তমানে দখলদারির কারণে ব্যক্তিগত সম্পত্তিতে পরিণত হয়েছে।


মন্দিরে একটি প্রাচীন পশুবলির খাঁড়া রয়েছে যার গায়ে বঙ্গাক্ষরে '১০৮১ সাল' খোদিত ছিল, তবে মরিচা পড়ায় এখন আর তা স্পষ্ট নয়। ঐ খাঁড়ায় পশুবলি হয় না, বলির জন্য আলাদা খাঁড়া ব্যবহৃত হয়। দেবী প্রথমে চন্দনকাঠের সিংহাসনে অধিষ্ঠিতা ছিলেন। প্রায় ৮০ বছর আগে তাতে আগুন লেগে পুড়ে যায়। বর্তমানের সিংহাসনটি সেই সময়ের তৈরী।

সুদূর অতীতে এ অঞ্চলে যে একটি সমৃদ্ধ জনপদ ছিল, তার প্রমাণ রয়েছে। অতীতে মন্দির সংলগ্ন কালিদহ পুকুরে খননের সময় নললাগানো বিভিন্ন ধরনের পোড়ামাটির পাত্র পাওয়া গিয়েছিল। স্থানীয় বেরা পরিবারের পুকুর খুঁড়তে গিয়ে পোড়ামাটির বেড় দেওয়া পাতকুয়া এবং ইটের রাস্তাও পাওয়া গিয়েছিল বলে স্থানীয় প্রবীণদের মত। তবে শুধুমাত্র এই গ্রামেই নয়, রূপনারায়ণ ও দামোদর নদ তীরবর্তী সমগ্র শ্যামপুরে বিভিন্ন স্থানে খুঁড়তে গিয়ে প্রাচীন মূর্তি ও মৃৎপাত্র পাওয়া গিয়েছে একাধিক বার। যথাযথ অনুসন্ধান চালালে হয়তো আরও অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যেতে পারে। কালীমন্দিরের কাছে  যেখানে হাট বসে তার পাশে বটগাছের তলায় কয়েকটি সিঁদুর মাখানো নুড়ির সাথে একটি পোড়ামাটির অদ্ভুত দর্শন মুখাবয়ব দেবী ষষ্ঠী হিসেবে পূজিত হতেন যার সঙ্গে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বারা ঠাকুরের (দক্ষিণ রায় ও নারায়ণী)  আদলের মিল ছিল। তবে সাম্প্রতিক আমফান বিপর্যয়ে বটগাছটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় মুখাবয়বটি ভেঙে টুকরো হয়ে যায়।

গ্রামের বনেদি বংশ হল বিশ্বাস ও বেরা।  এখন যেখানে ডিহিমণ্ডলঘাট হাইস্কুল  অবস্থিত, পূর্বে সেখানে পত্তনিদার বিশ্বাসদের  কাছারি বাড়ি ছিল। তারই নিকটে আনুমানিক ১৫০ বছর পূর্বে সীতাপতি বিশ্বাসের পূর্বপুরুষ রামলাল বিশ্বাস পশ্চিমমুখী কমলেশ্বর শিবমন্দিরটি প্রতিষ্ঠা করেন।  দৈর্ঘ্য প্রস্থে ১২'৩" (৩.৭ মি.) এবং প্রায় ৩০'(৯.২ মি.) উচ্চতা বিশিষ্ট এই মন্দিরের গর্ভগৃহের ছাদ চার দেওয়ালের কোনে উদ্গত লহরা নির্ভর গম্বুজের উপর স্থাপিত। পূর্বে সামনের দেওয়ালে পঙ্খের অলংকরণ ছিল কিন্তু বর্তমানে তার কোনও চিহ্ন নেই। পাশের রাস্তা থেকে প্রায় ১০ ফুট উঁচু ভূমির উপর প্রতিষ্ঠিত এই মন্দিরের নোনাধরা দেওয়ালে কালের থাবা স্পষ্ট। এখানে ওখানে গাছ ও লতা গজিয়ে উঠেছে। বিশেষত নিচের দিকের বিভিন্ন অংশ থেকে ইট খসে পড়ছে। যথাযথ ভাবে সংরক্ষণ করতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে  পুরাতত্ত্বের এমন অনবদ্য নিদর্শনটি সম্পূর্ণভাবে হারিয়ে যাবে।

গ্রামের শীতলা মন্দিরটি  কালীমন্দিরের সমসাময়িক। ঘটের উপর শিলা দেবী রূপে পূজিত হন।  প্রতিষ্ঠাতা রাজেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী নামের জনৈক তান্ত্রিক। জনশ্রুতি অনুযায়ী, বর্তমান বাঁধানো বকুল গাছের পাশে কুটিরে তিনি থাকতেন। প্রথমে মন্দিরটি মাটির দেওয়াল, তালপাতার ছাউনি ছিল। বর্ধমানের মহারাজ একবার বেড়াতে এসে ঐ তান্ত্রিককে মদনমোহনজীর একটি পেতলের মূর্তি ও ৩২ বিঘা জমি দেবোত্তর সম্পত্তি হিসেবে দান করেন। আন্টিলাপাড়ার জনৈক বিন্দুবাসিনী দেবী এ মন্দিরের রক্ষণাবেক্ষণ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর স্থানীয় মাজি বংশের কর্তারা পার্শ্ববর্তী  বরদাবাড় গ্রামের হরিপদ মিশ্রকে পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত করেন। সেই থেকে তাঁর উত্তরসূরীরা পূজা করে আসছেন। ৬০ বছর আগে মদনমোহন মূর্তিটি চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে মন্দিরে শীতলা দেবী ছাড়াও মনসা, পঞ্চানন্দ, জ্বরাসুর, দক্ষিণরায়, রূপ রায়, পাঁচুগোপাল ও রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ রয়েছে। মাটির মন্দিরটিকে কংক্রিটের তৈরি করে দেন জহরলাল মাজি। নব কলেবর হয় ৪ ঠা মার্চ ১৯৭৬ সালে। এরপর ২০১৯ সালের ৭ মে জহরলাল মাজির উত্তরসূরীরা মন্দিরের সংস্কার করেন।

 *******************


তথ্য সূত্রঃ-
১.হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি - তারাপদ সাঁতরা, ১৯৭৬
২. হাওড়া জেলার ইতিহাস(২য় খন্ড) -অচল ভট্টাচার্য, ১৯৮২
৩. আইন- ই- আকবরী - আবুল ফজল( অনু. - পাঁচকড়ি বন্দ্যোপাধ্যায়,২০১৭
৪. Bengal District Gazetteer Howrah - L.S.S. Omalley, 1909
৫.  A Statistical Accounts of Bengal ( vol.- 3) - W.W.Hunter,1875

মানচিত্রঃ-
১. ১৭০৩ সালের ইংলিশ পাইলট চার্ট

Friday, February 5, 2021

অষ্টম পর্বঃ শ্যামপুরে সুফি ধর্ম ও ঐতিহাসিক পীর মাহাত্ম্য


✍️ আশিস চক্রবর্তীঅমলেন্দু বেরা

লৌকিক ইতিহাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই স্মৃতিবাহিত। সত্যের সঙ্গে কল্পনার মিশেলে প্রক্ষেপও ঘটেছে তাতে। তাই কিংবদন্তি আর বাস্তবতা ওতোপ্রোতো ভাবে মিশে যায় লোকসংস্কৃতির অন্তর্বয়নে।

হাওড়া জেলার দক্ষিণে শ্যামপুর থানার বিভিন্ন গ্রামে ঐতিহাসিক পীরের পাশাপাশি অনেক কাল্পনিক পীর- পীরানীর থান বা মাজার রয়েছে। যেমন- মানিকপীর, গাজীপীর, ছাবাল পীর, ওলাবিবি, বনবিবি ইত্যাদি হলেন কাল্পনিক পীর। মানিকপীর, ছাবাল পীর, গাজীপীর হলেন গৃহপালিত পশু রক্ষক; বনবিবি বনাঞ্চলের অধিষ্ঠাত্রী; ওলাবিবি কলেরা- হাম-বসন্ত রোগের নিরাময়কারী। আবার সীতাপুর ও বরাগাছি নিকটবর্তী কাশীপুর গ্রামের দেওয়ান বা দাওয়ান বা দাওন পীর, গড়চুমুকের সুজন পীর, বারগ্রামের বড়খান গাজী হলেন ঐতিহাসিক পীর।




নদীমাতৃক শ্যামপুরের ধর্মীয় মানচিত্রে শুধু নয়,সমগ্র ভারত উপমহাদেশেই পীরবাদ হল একটি মুক্ত অসাম্প্রদায়িক লৌকিক মতবাদ যেখানে হিন্দু মুসলমান ও অন্যান্য মতাদর্শের মানুষ নিঃসংকোচে মিলতে পারে।
'পীর' ফারসি শব্দ, যার ব্যুৎপত্তিগত অর্থ 'বয়োজ্যেষ্ঠ'। সম্ভবত পরবর্তী কালে আধ্যাত্মিক গুরু অর্থে এর প্রয়োগ হয়। সুফি ধর্মে গুরুকে বলা হয় পীর এবং তাঁর অনুগামীদের বলা হয় ফকির বা দরবেশ।
দেওয়ান পীরঃ-
শ্যামপুর থানার সীতাপুর ও কাশীপুর গ্রামের যে দুজন পীরের মাজার রয়েছে তাঁরা উভয়েই দেওয়ান পীর নামেই প্রসিদ্ধ। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, জনমানসে উদারনৈতিক ইসলাম ধর্মের প্রচারের জন্য বহু বছর আগে একই পরিবারের সাতভাই হাওড়া ও ২৪ পরগণা জেলায় চলে আসেন। তাঁদের মধ্যে দু'ভাই রয়েছেন সীতাপুর ও কাশীপুরে। তাঁরা কোথা থেকে এসেছিলেন তা জানা যায় না। তবে তাঁরা অলৌকিক ক্ষমতাসম্পন্ন ছিলেন, নানা জড়িবুটি ও টোটকা সম্পর্কেও ধারণা ছিল তাঁদের। প্রতি বছর ১ লা মাঘ উক্ত স্থানদুটিতে পীরের স্মরণে বিশেষ উৎসব পালিত হয়। ধর্ম বর্ণ জাতি নির্বিশেষে সব মানুষ এই উৎসবে সামিল হন।




শ্যামপুরের দেওয়ান পীরের প্রকৃত নাম কি ছিল তা হয়তো আজ আর খুঁজে পাওয়া সম্ভব নয়। তবে 'দেওয়ান' বা 'দাওয়ান' শব্দের ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে কিছু কথা বলা যায়। 'বঙ্গীয় শব্দকোষ' অনুযায়ী 'দেওয়ান' হলেন খাজনা আদায়ের প্রধান কর্মচারী। তবে কি এখানকার পীর ইসলামের প্রচারের পাশাপাশি রাষ্ট্রযন্ত্রের অধীনেও কাজ করতেন?
এ প্রশ্নের উত্তর নিহিত আছে পীরবাদের উদ্ভবের ইতিহাসে।
'মূলতঃ দ্বাদশ শতক থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশে সুফি ধর্মের প্লাবন আছড়ে পড়ে। বলা হয়ে থাকে যে সুলতানি সাম্রাজ্য স্থাপনের পর ইসলামের অবক্ষয় দেখে কয়েকজন ধর্মপ্রাণ মুসলমান রাষ্ট্রের সঙ্গে সর্ব প্রকার সম্পর্ক ছিন্ন করে আল্লাহ ও মানুষের প্রেমের সম্পর্কের উপর গুরুত্ব স্থাপন করেন। ইসলামের আদর্শের সঙ্গে যুক্ত হয় ভারতীয় যোগদর্শন, উপনিষদ ও থেরবাদী বৌদ্ধ সংস্কৃতি। সুফি ধর্ম এই রসায়নের ফলশ্রুতি। বিশিষ্ট সুফি বিশেষজ্ঞ নুর রহমান লিখেছেন "The belief in Pirs and worship at their shrines did not originate in India but were brought from Afghanistan, Persia and Iraq by the immigrants, along with their religious orders. But in India in general and Bengal in particular, certain factors facilitated the penetration of the saint worship into Muslim society. Pir worship was a form of joint worship of the Hindus and the Muslims in medieval Bengal." তবে শুধু ইসলাম ও হিন্দু সংস্কৃতি নয়, সুফি মতাদর্শ নির্মাণে বৌদ্ধ প্রভাবও রয়েছে।
ইতিহাস থেকে জানা যায়, এক একজন সুফি সাধককে কেন্দ্র করে এক একটি সম্প্রদায় বা সংঘ গড়ে ওঠে । আইন-ই-আকবরী গ্রন্থে ১৪ টি সুফি সংঘের উল্লেখ রয়েছে। তার মধ্যে ভারতে এসেছিল যে ৪ টি সেগুলি হল চিশতি, সুরাবর্দি, মদানি ও ফিরদৌসী। এদের মধ্যে সুরাবর্দি সম্প্রদায়ের সুফিরা পাঞ্জাব, মুলতান ও বাংলায় প্রভাবশালী ছিলেন। প্রাচীন মদিনা নগরীর সুরাবর্দি নামক এক গ্রাম থেকে 'সুরাবর্দি' শব্দের উৎপত্তি। এই সম্প্রদায়ের সাধকদের মধ্যে শেখ আবু নাজিব আব্দুল কাহির, শেখ শাহাবুদ্দিন বিশেষ উল্লেখযোগ্য। সুরাবর্দি পীরগণ রাজদরবারের সঙ্গে আত্মিক সম্পর্ক রাখতেন এবং রাষ্ট্রের অধীনে উচ্চপদ গ্রহন করতেন।হয়তো এই দেওয়ান সাহেব নামে প্রসিদ্ধ সাতজন পীর নবাবের কর্মচারী ছিলেন। তবে প্রকৃত পরিচয় অস্পষ্ট হলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে একথা নিশ্চিত ভাবে বলা যায় যে দ্বাদশ শতক থেকে ইসলামের প্রচারেরর উদ্দেশে মরমিয়াবাদী পীরগণ তথা সুফি সাধকেরা দলবদ্ধ ভাবেই অবিভক্ত বাংলা সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঞ্চলে এসেছিলেন।
আবার পীরের পূজারীকে 'দাওয়ান' বলা হয়। এ প্রসঙ্গে সীতাপুর ও কাশীপুরের মানুষ জন বংশপরম্পরায় যে কিংবদন্তী বহন করে চলেছেন সেটি হল গভীর রাতে সাদা আলখাল্লা পরিহিত পক্ককেশ দাওয়ান নাকি ঘোড়ায় চড়ে ঘুরে বেড়ান। অতীতে কেউ কেউ নাকি ঘোড়ার ক্ষুরের শব্দও শুনেছে। এ কাহিনি অবশ্য প্রায় সমস্ত পীরের মাজারেই প্রচলিত।হয়তো সীতাপুর বা কাশীপুরে তেমনই কোনো দাওয়ান পীরের মর্যাদায় উন্নীত হয়ে থাকবেন।এমন ঘটনা অসম্ভব নয়। কারণ মধযুগের বাংলার ধর্মীয় ইতিহাস পর্যালোচনায় জানা যায়, মুসলমান সেনাপতিগণও যুদ্ধে নিহত হলে গাজীপীর নামে পুজিত হতেন।
আসলে ব্রাহ্মণ্য শাসিত অন্ত্যজ হিন্দু ও সাধারণ মুসলমানের কাছে পীর হলেন অলীক মানুষ। তিনি বাতাসের গতিতে অল্প সময়ে দীর্ঘ পথ অতিক্রম করতে পারেন, অসুখ-বিসুখ সারিয়ে দিতে পারেন,বন্য হিংস্র জীব-জন্তুকে পোষ মানাতে পারেন, দৈব- দুর্বিপাক আগে থেকেই বুঝতে পারেন ইত্যাদি। তাই হিন্দু মুসলমান উভয় সম্প্রদায়ের মানুষজন পীর বা পীরের দরগায় মানত করেন বা কবচ-মাদুলি ইত্যাদির সাহায্যে বিপদ এড়াবার প্রয়াস করেন। সাধারণত পৌষ-মাঘ মাসে পীরের থানে উৎসব হয়। বছরের এই সময়টাকে বেছে নেওয়ার কারণ মনে হয়, কৃষিপ্রধান বাংলায় অতীতে হিন্দু মুসলমান নির্বিশেষে নিম্নবর্গের দরিদ্র কৃষকেরা এই সময়েই একফসলা জমি থেকে ফসল ঘরে আনত এবং সেটাই ছিল তাদের দিনাতিপাত ও বিনোদনের মূল রসদ।তাই সম্বৎসর পীরবাবা নানা অসুখ বিসুখে যে উপকার করেছেন তার জন্য সাধারণ ভক্তরা তাদের উপার্জিত অন্নের কিছুটা অংশ অর্ঘ্য হিসেবে নিবেদন করত এই সময়ে যা কালক্রমে উৎসবের রূপ নেয়।
স্বয়ং পীর বা পীরের পুজারী মুখ্যত ইসলাম ধর্মাবলম্বী হলেও শরিয়ত-কেন্দ্রিক ইসলামের সঙ্গে পীরবাদের প্রভেদ রয়েছে। ইসলাম আল্লাহ্ ব্যতীত আর কাউকেই শ্রেষ্ঠ বলে স্বীকার করে না এবং মূর্তি বা প্রতীকের সাধনাকেও নিষিদ্ধ বলে মানে। কিন্তু পীর বাদে এ সব কিছুকেই স্বীকার করা হয়েছে এবং সম্প্রদায়গত আচার-সংস্কারকে বজায় রেখে মৈত্রী ও প্রেমকে প্রতিষ্ঠা দেওয়া হয়েছে। সেখানে 'নজরানা', 'মানৎ' যেমন বৈধ, তেমনই কোনো রূপ শাস্ত্র বিধি না মেনে, কোনো মন্ত্র উচ্চারণ না করে কেবল ঐকান্তিক ইচ্ছে ও ভক্তিকে প্রকাশ করা স্বীকৃত। সেখানে পার্থিব জীবনের লৌকিক সুবিধে অসুবিধেগুলোও নিরলঙ্কৃত ও অকৃত্রিম ভাবেই গৃহীত হয়। 'বাবা মঙ্গল কর', 'বাবাসাহেব অসুখ ভালো করে দাও', 'পীরবাবা সন্তুষ্ট হও'.... এইরকম সহজ অনাড়ম্বর উচ্চারণই পূজা। পীরদের সঙ্গে মোল্লাদের অন্যতম পার্থক্য এখানেই। মোল্লারা মুসলমানদের স্বর্গ আর নরকের ভয় দেখিয়ে ইসলামকে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। কিন্তু সুফি ধর্মে পীর দরবেশরা ভক্তি ও ভালোবাসার মাধ্যমে ঈশ্বরকে খোঁজার কথা বলেন। গুরুর কাছে দীক্ষা নিয়ে সৃষ্টি কর্তা বা আল্লাহ্-এর প্রেমলাভের কথা বলেন। সুফি সাধনায় এটি 'আশুক-মাশুক' তত্ত্ব নামে পরিচিত। 'শুকের' অর্থ যে ভালোবাসে এবং 'মাশুকের' অর্থ যাকে ভালোবাসা যায়। গৌড়ীয় বৈষ্ণব দর্শনে একেই পক্ষান্তরে 'জীবাত্মা-পরমাত্মা তত্ত্ব' বলা হয়েছে । সুফি সাধক 'ফানাফিল্লাহ' হলে অর্থাৎ আল্লাহ্-এর প্রেম সাধনা করে তাঁর সঙ্গে একাত্ম হলে 'কামেল ইনসান' বা পীর হওয়ার যোগ্য হন। তিনি সব মানুষের মুশকিল আসান; ভক্তি ও ভালোবাসায় মনের মানুষ। ষোড়শ শতকে চৈতন্য এই ভক্তিবাদের জোয়ারেই বাংলাকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন জাতপাতের বাধা ও মন্দিরকেন্দ্রিক প্রাতিষ্ঠানিকতার বেড়াজাল ভেঙে। কবির উচ্চারণ করেছিলেন "ভ্রান্ত গরিমা দরজায় তালা দিয়ে দেয়,ভক্তি আর ভালোবাসার চাবি দিয়েই তাকে খুলতে হয়।" সুফি ধর্মে তাই প্রেমই সত্য।
পূর্বেই বলেছি যে সুফি মতবাদে শুধু ইসলাম ও হিন্দু নয়, বৌদ্ধ সংস্কৃতিরও প্রভাব রয়েছে। প্রথমত, ফারসি 'পীর' শব্দটি বৌদ্ধ 'থের' ( সং-স্থবির) শব্দের হুবহু অনুসরণ; উভয় শব্দেরই অর্থ 'বৃদ্ধ ব্যক্তি'।
দ্বিতীয়ত, পীরের থান হিসেবে বিভিন্ন গ্রামে যে স্থাপত্যটিকে শ্রদ্ধা জানানো হয় তার গঠন অনেকটা শঙ্কু আকৃতির। ভূমি থেকে সামান্য উঁচু বেদীর উপর একটি বা দুটি বা তিনটি মাটি বা কংক্রিটের তৈরি ঢিবি বা স্তুপ। এই স্তুপের ধারণা বৌদ্ধ সংস্কৃতি থেকে আগত। কারণ শুরুতে বৌদ্ধ ধর্ম নিরাকারে বিশ্বাসী হলেও বুদ্ধের মৃত্যুর পর রাজা অজাতশত্রু ও বৈশালী, কপিলাবস্তু, অলকপপ, রাজগ্রাম, বেটদীপ, গাবা ও কুশী নগরের রাজাগন তাঁর দেহাবশেষ নিয়ে গিয়ে আটটি জনপদে আটটি স্তুপ নির্মান করেন। এই স্তুপগুলিই বুদ্ধকে উদ্দেশ্য করে তৈরি বৌদ্ধ ধর্মের প্রথম স্থাপত্য। পরবর্তীকালে প্রবীণ বৌদ্ধ সন্ন্যাসী বা প্রধান ভান্তের মৃত্যুর পর তাঁর দেহাবশেষ বা ব্যবহৃত জিনিসকে সংঘের বাকি সদস্যরা স্তুপ করে রাখতে শুরু করেন। একে বলা হয় 'চৈত্য'।এখানেই বৌদ্ধধর্মাবলম্বীরা বিভিন্ন সময়ে উপস্থিত হয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বা একান্ত নিজস্ব মনোবাসনা ব্যক্ত করেন। পীর ধর্মে এর অনুকরণ দেখা যায়। পীর বা দরবেশদের সমাধি বা স্মৃতি বিজড়িত ভূমিতে একটি স্তুপ নির্মাণ করা হয় তাঁকে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য বা তাঁর কাছে প্রার্থনা করার জন্য। একে বলা হয় মাজার। কোথাও কোথাও এক বা একাধিক প্রতীকী স্তুপ নির্মাণ করে কোনো না পীর বা পীরানীর নামে শিরনী, বাতাসা, দুধ ইত্যাদি নিবেদন করা হয়। তবে শ্যামপুরের যেসব স্থানে পীরের মাজার আছে, সেগুলি যে সংশ্লিষ্ট পীরের সমাধি তেমন নয়। এ বিষয়ে সীতাপুর দাওয়ান পীরের বর্তমান খাদেম (দরগার কর্তা বা পুরোহিত)রফিকুল ইসলাম জানান যে এই স্থাপত্য পীরের স্মরণে তৈরি একটি কল্পিত সমাধি যেখানে ভক্তরা এসে কোনো কিছু মানত করে বা অসুখ সেরে যাওয়ার কারণে পোড়া মাটির ঘোড়া উৎসর্গ করে বা শ্রদ্ধা জানায়।
তৃতীয়ত, বছরের একটি নির্দিষ্ট দিনে বা সময়ে পীরের কাছে যে জমায়েত হওয়া তার সঙ্গে বৌদ্ধ সংস্কৃতির মিল রয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাও স্তুপের সামনে এভাবেই মিলিত হন। বৌদ্ধ ধর্মে এই অনুষ্ঠানকে বলা হয় 'মঙ্গলসূত্র মন্ত্রপাত'।
চতুর্থত, প্রাচীন বৌদ্ধদের থের-সমাধি- সংশ্লিষ্ট আচারগুলি, অর্থাৎ ধূপ-ধূনা জ্বালানো,চন্দন অনুলেপন,পুষ্পাঞ্জলি প্রদান ইত্যাদিও পীরধর্মে লক্ষ্য করা যায়।
এবার দাওন পীরের প্রসঙ্গে ফেরা যাক্। সীতাপুর ও কাশীপুর উভয় স্থানেরই জনশ্রুতি, দাওন সাহেব নামে সাতজন ভাই বাংলার বিভিন্ন এলাকায় ইসলামের প্রচার ও মানবসেবার জন্য এসেছিলেন। এই কাহিনি বোধহয় মিথ। অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন এলায়ায় পাঁচজন বা সাতজন ভাই পীর হিসেবে এসেছিলেন, এমন কথা প্রচলিত। নিকটবর্তী উদয়নারায়ণপুরের সিংটি গ্রামে ভাই খাঁ পীরের স্মরণে যে মেলা হয়, জনশ্রুতি অনুযায়ী তাঁরাও সাতভাই। তাঁরা প্রায় সাতশ বছর আগে সুদূর আরব থেকে এসে হাওড়া হুগলি, কলকাতায় আস্তানা বা 'খানকা' স্থাপন করেন।ভাই খাঁ ছাড়া অন্যান্যরা হলেন ফতে আলি খাঁ (মুন্সিরহাট,হাওড়া), মাদার আলি খাঁ (চাখানা, আমতা), জুম্মান খাঁ (পার্কসার্কাস, কলকাতা), সুফিক আলি খাঁ (বোড়হল,হুগলি), গোলাম আলি খাঁ (পারাম্বুয়া, হুগলি), মৌলালি খাঁ (শিয়ালদহ, কলকাতা)।
সুজন পীরঃ-
গড়চুমুক গ্রামে 'সুজন দীঘির' পাড়ে শাহ্ সুজন পীরের মাজার রয়েছে। স্থানীয় জনশ্রুতি অনুযায়ী, সুজন পীর দামোদর নদের ধারে এই স্থানে বসবাস করতেন। শাজাহানের আমলে নূর নামের এক সামন্ত- রাজা পীরের অনুরোধে একটি মসজিদ ও সাধারণের জলকষ্ট নিবারণের জন্য একটি দীঘি খনন করিয়ে দেন। অলৌকিক ভাবে সুজন পীর এক রাতেই মক্কার আজমজমা থেকে দু' কুঁজো পবিত্র জল এনে একটি ঢেলে দেন দীঘিতে, অন্যটি রাখেন মসজিদে। যথাসময়ে রাজস্ব না দেওয়ায় বাদশাহ্ নূর খাঁকে হুকুম করেন "বাদশাহ্কা কড়ি নূর খাঁ কা নাম" বলার জন্য। কিন্তু নূর খাঁ ভুল করে "নূর খাঁ কা কড়ি বাদশাহ্কা নাম" বলায় বাদশাহর নির্দেশে তাঁর শিরশ্ছেদ করা হয়। সুজন পীর নূর খাঁর কাটা মুন্ড জোড়া লাগানোর জন্য মসজিদে রাখা মক্কার পবিত্র জলভরা কুঁজো নিয়ে সেদিকে অগ্রসর হলে বাদশাহর লোকজন তাঁকে বাধা দেয় ও উপহাস করতে থাকে। রুষ্ট পীর পথের পাশে বলিপ্রদত্ত একটি মোষের উপর কুঁজোর জল ঢেলে দিলে মোষটি জীবিত হয়ে ওঠে। কিন্তু সব জলটুকু খরচ করে ফেলায় নূর খাঁকে আর বাঁচানো সম্ভব হয়নি। মসজিদটি বর্তমানে ভগ্ন ও জঙ্গলাকীর্ণ। এ কাহিনী যে সময়ের তখন মসজিদের পাশ দিয়ে প্রবল বেগে প্রবাহিত হত দামোদর। সম্ভবত তারই কোনো চোরা স্রোতে ভূমি বশে যাওয়ায় মসজিদটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছিল। মসজিদের উত্তরে রয়েছে প্রায় ২৫ বিঘার সুজন দীঘি এবং পূর্বে শাহ্ সুজন পীরের মাজার। ভগ্ন মসজিদে কয়েকটি পাথরের সুন্দর স্তম্ভ এবং ইটের তৈরী দেওয়ালের অংশ এখনো দৃশ্যমান । অতীতে নিকটবর্তী রায় পরিবারের পুকুর খননের সময় ইটের দেওয়াল ও ধূসর রঙের পাত্র পাওয়া গিয়েছিল। ইটগুলির মাপ ২০x১৯x ৫ সেমি.। হাওড়া জেলা গবেষক তারাপদ সাঁতরা এসবের প্রেক্ষিতে এ অঞ্চলে মুসলিম পূর্ব যুগে একটি প্রাচীন জনপদের অস্তিত্ব অনুমান করেছেন।

বড়খান গাজীঃ-
বারগ্রামের মসজিদের উত্তরে বড়খান বাবার থান রয়েছে। যদিও এটি তাঁর মাজার বা সমাধিক্ষেত্র নয়, 'খানকা' বা আস্তানা। বড় খান বাবা বা বড়খান গাজী ব্যাঘ্রদেবতা হিসেবে সর্বত্র খ্যাত। কথিত আছে,ইসলামের প্রচারের জন্য তিনি প্রথম যৌবনে পিতার বিপুল সম্পত্তি ত্যাগ করে সুন্দরবন অঞ্চলে চলে আসেন। সুন্দরবনে তাঁর প্রভাব সর্বাধিক হলেও হাওড়া, মেদিনীপুর জেলার বিভিন্ন গ্রামে তাঁর নামে থান রয়েছে। পূর্বে দামোদর তীরবর্তী বারগ্রাম সহ সমগ্র শ্যামপুর, বাগনান, উলুবেড়িয়া থানা গভীর অরণ্যসঙ্কুল ছিল। সম্ভবত নদীপথে যাতায়াতের সময় তিনি বারগ্রামের উক্ত স্থানে আস্তানা করেছিলেন।তিনি 'জিন্দা পীর' নামেও পরিচিত। মৈমনসিংহ-গীতিকার 'মহুয়া' পালায় বলা হয়েছে -
"চাইর কোন পিরথিমি গো
বইন্ধ্যা করলাম স্থির।
সুন্দরবন মোকামে বন্দলাম
গাজী জিন্দাপীর।। "
তবে গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু মনে করেন, 'বড় খান গাজী' বা 'জিন্দাপীর ' কারও ব্যক্তিনাম নয় ---- ইসলাম ধর্মপ্রচারকদের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়দের ঐরূপ বলা হত।
************
তথ্য সূত্রঃ
১.বঙ্গে স্বূফী প্রভাব - মুহম্মদ এনামুল হক,২০১২
২. বাঙলার সূফী সাহিত্য - আহম্মদ শরীফ,২০১৫
৩. হাওড়া জেলার পুরাকীর্তি - তারাপদ সাঁতরা, ১৯৭৬
৪. বাংলার লোকসংস্কৃতির বিশ্বকোষ - দুলাল চৌধুরী ( সম্পা.),২০০৪
৫. বাংলার লৌকিক দেবতা - গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসু,১৯৬৬
৬. পশ্চিমবঙ্গের সংস্কৃতি - বিনয় ঘোষ, ১৯৯২
৭. হাওড়া জেলার মন্দির পূজা উৎসব মেলা- তপন কুমার সেন,২০০৯
৮. বুদ্ধ কেমন দেখতে ছিলেন - চিত্রা দেব,
৯. বাংলায় হিন্দু - মুসলমান সম্পর্ক ( মধ্যযুগ)- জগদীশ নারায়ণ সরকার,১৪২১
১০. মৈমনসিংহ গীতিকা - দীনেশচন্দ্র সেন( সম্পা),১৯৫৮
১১. Hindu- Muslim Relation in Mughal Bengal - Shah Noor Rahman, 2001
১২. 'চার নম্বর প্ল্যাটফর্ম' পত্রিকা, ১ ফেব্রুয়ারী ২০২০
১৩. 'খোলামন ' পত্রিকা, ১৯ ডিসেম্বর ২০২০

দশম পর্বঃ জাল্লাবাজের কথা (Jallabaz-er katha)

✍️   আশিস চক্রবর্তী  ও  অমলেন্দু বেরা হাওড়া জেলার দক্ষিনে শ্যামপুর থেকে গাদিয়াড়া সড়কের মধ্যে অবস্থিত গুজারপুর বাসস্টপ থেকে আড়াই কি. মি. দূরে...